হাসান তানভীর এর MOTO-TRAVEL ব্লগ

Its better to travel well, then to arrive – Buddha

বন্য হাতীর খোঁজে (১ম পর্ব)

DSC05909 copy

বন্য হরিন দেখা হয়েছে নিঝুম দিপ আর মন পুরা দিপ এ গিয়ে।  এবার শখ জেগেছে বন্য হাতি দেখবো।

চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবজার জেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্য হাতি কিন্তু প্রায়শ ই লোকালয়ে এসে পড়ে ধান খাবার লোভে।   এবারের মিশন – বন্য হাতি। একবার টেকনাফ (টেকনাফ নিয়ে আমার পোস্ট) গিয়ে বন্য হাতি দেখার চেস্টা করে ছিলাম। কিন্তু সময়ের অভাবে জঙ্গলের বেশী ভেতরে যেতে পারিনি। শুর করি। অল্প কথায় শুরু করে ফেলবো। কারন এটা প্রথম পর্ব। হাতীর সাথে ইনশাল্লাহ মোলাকাত হবে ২য় পর্বে।

আজ ভেবেছি কোন টুর দেবো না। কিন্তু সকাল ১১ টার দিকে মন টানতে লাগলো। ব্যাস। বাইক বিসমিল্লাহ বলে বের করে দিলাম টান। বাইক চালিয়েছি কার্পেট মসৃণ রোড দিয়ে – ২ পাশে ছিলো দিগন্তের সাথে মিলে যাওয়া পাকা ধানের খেত। আর ছিলো পাহাড়ের ভেতর বন্য হাতীর খোঁজে ঢুকে পড়া। প্রথমে বাশখালির রোড দিয়ে বাইক টানতে লাগলাম ১০০ গতিতে। গতবার বাশখালি বিচ, বাশখালি ইকো পার্ক এই রোড দিয়েই গিয়েছিলাম।

এই রোড এ একবার আমার সাথে ছিলো জাকির ভাই। আমরা গিয়েছিলাম বাশখালি বিচ।  Hope so, ওনার মনে আছে এই রোড টির কথা। এই রোড এখন আমি বলব বাইকার দের জন্য ভু-সর্গ। পটিয়া গিয়ে – আনোয়ারা টার্ন না নিয়ে এই রোড এ চলে যেতে হবে। আর ঢুকেই মনে হবে অন্য ভুবনে চলে এসেছি। এ যেন রেসিং ট্রেক। রোড এ একটা বালু কনাও যেন নেই। কি মসৃণ। ২ পাশেই সারি সারি সবুজ গাছ – আর ধান খেত সব দুর দুর পর্জন্ত চলে গেছে – শেষে গিয়ে চুমু দিয়েছে পাহাড়ের গায়ে। ধানের গন্ধ আর মোলায়েম হাওয়াতে বাইক নিয়ে আমি ছুটে চললাম অজানা এক গন্তব্য। DSC05971 copy মাঝে মাঝে আকা বাকা পথ। আবার সোজা। মাঝে মাঝে গ্রাম – আবার বনানি – পাহাড়। মাঝে আমি ছুটে চলি। এক সময়ে দেখি অদ্ভুদ ধরনের কিছু গাছ। পথের পাশেই। ওখানে ব্রেক দিলাম। এটা ছিলো একটা লিচু বাগান। যাক সিজনে এসে লিচু খাওয়া যাবে। 😀  খোজ খবর করলাম হাতি কোথায় আছে। DSC05912 copy এর পর আরো কিছু দুর যাওয়ার পর একটা পথ পেলাম। বায়ে ঢুকে গেছে। সম্ভবত এটার কথাই শুনে ছিলাম। দিলাম ছুট। DSC05913 copy একটু ঢুকতেই ২ পাশে জঙ্গল পাওয়া গেলো। চওড়া পথ ধীরে ধীরে সুর হয়ে যেতে লাগলো।    আমি আগাতে লাগলাম। DSC05916 copy  দারুন রোমাঞ্চ কর ছিলো এমন ধরনের একটা পথে একাকি ছুটে যাওয়া। কারন চারদিক ভীষণ নিঃশব্দ। আর আমি জানি না সামনে কি আছে। অদুরে পাহাড় লক্ষ্য করে এগোতে লাগলাম। এক সময় একটা খোলা জায়গায় এসে পোউছালাম। কেমন যেন অদ্ভুদ খাপছাড়া জায়গাটা। কিছু টা জায়গায় বালিয়াড়ি। তবে দারুন সুন্দর। ৩/৪ ফুট চওড়া ছড়ার মত পানির একটা প্রবাহ কোত্থেকে এসেছে।

DSC05915 copy

DSC05917 copy এসে একটা কুমের মন জায়গায় জমা হচ্ছে। আমার ভয় ভয় ও করছিলো। ভুতের ভয়, ডাকাতের ভয়। কিছু খন পর লক্ষ্য করলাম এক মহিলা আর একটা ছোট ছেলে পাহাড়ের নিচে বসে আছে। প্রথমে ভাবলাম ভুত নাকি রে বাবা। এই খানে মানুষ কোত্থেকে আসলো। কিছু খন পর ধাতস্ত হয়ে পানির ছড়া পার হয়ে (গভীরতা নেই – এই পানি নাকি মাটি ফুড়ে বের হয়ে আসে।

আল্লাহর কি নেয়ামত। এমন জায়গায় তেও তিনি পানির ব্যবস্থা করে রেখেছেন। গেলাম কথা বলার জন্য। এবং জানতে পারলাম আমি একদম জায়গা বরাবর ই এসেছি। হাতীর দল পাহাড় থেকে এই উপত্যকায় নেমে আসে – ওখান থেকে পানি খায়, খেলা ধুলা করে আর এক টা পথ চলে গেছে – এক দিক দিয়ে। ওখানে প্রচুর খেত আছে- লোকালয়ের কাছে। ওখানে ধান খেতে যায়। DSC05926 copy DSC05931 copy কথায় কথায় অনেক কিছু জানলাম হাতীর দলের ব্যাপারে। এর কখন আসে, কিভাবে এদের দেখা পাওয়া যায়। ওখানে দেখলাম হাতীর “ইয়ে” পড়ে আছে। যাক। হাতির দেখা না পেলে আপাতত “ইয়ে” ই চলবে। DSC05920 copy এরা আমাকে আরো ভেতরে পাহাড়ের কোলে এক বাসায় নিয়ে গেলো। এই এক টা মাত্র বাসা পুরা উপত্যকায়। আমার মনে পড়ে গেলো সেন্ট মার্টিন- ছেঁড়া দ্বিপ এর বাসিন্দা হোসেন আলির পরিবারের কথা। (এখানে আছে আমার ছেড়া দিপ টুর)  পুরা দ্বীপে একটা মাত্র ঘর। যাই হোক মহিলার ভাইয়ের ঘর। যাওয়া মাত্র ঠান্ডা এক গ্লাস সরবত। আহ। আলাপ জমে উঠলো। সাথে যোগ দিলো ওনার ছেলে। দু-নি-য়া-র তথ্য পেলাম।

আর তারপর জোর করে খাওয়া দাওয়া করিয়ে দিলেন ভদ্রলোক। 😀 দারুন সরল আর অমায়িক সবাই। আপন করে নিলো নিমিষে। গরু ভুনা আর মুরগীর গোস্ত দিয়ে দারুন জমল খাওয়াটা। heavy খিধা ছিলো পেটে। 😀 DSC05934 copy DSC05935 copy জানতে পারলাম ৫ মাইল দুরে আরো একটা জায়গা আছে – ওখানে চা বাগান আছে। ওই জায়গাটায় এমন কি দিনে দুপুরে হাতীর দল খেলে বেড়ায়। মুলত হাতি বের হয় রাতে সন্ধ্যার পর বা ৮ টায়, ১১ টায় বা রাত ৩ টায়। কোন ঠিক ঠিকানা নেই। তবে মাঝে মাঝে দিনেও আসে। দিনে রিস্ক থাকে বেশি।

কারন মানুষ দেখলে দেয় দউড়ানি। গত মাসে শুনলাম ৩ জন মারা গেছে। তাছাড়া লোকালয়ের বেশী ভিতরে ঢুকে পড়লে মানুষ সব এক হয়ে হাতিদের দেয় দউড়ানি। যাই হোক, এদের ঘর টা পাহাড়ের গোড়া তে – কিন্তু কিছুটা উপরে। এখান থেকে নাকি এরা উপত্তকায় আসা হাতি দের প্রায় ই দিনেও দেখে। DSC05936 copy এখানের পাহাড়ি জঙ্গল গুলোর উচ্চতা অত বেশী নয়। তবে এই সব পাহাড়ি জঙ্গলে ভরা। উপত্যকার সাথে লাগোয়া পাহাড়েও আছে প্রচুর লিচু গাছ। এরা ধান খেত করে না হাতি খেয়ে ফেলে বলে। লাগায় করলা, শসা ইত্যাদি। হাতি গরু ছাগল কেও আক্রমন করে। আসে ২০, ৩০ এমন কি ৮০ টাও হতে পারে দলে। যেটা বলছিলাম, ওই চা বাগানে যাবো সামনে হাতি দেখার জন্য। তবে হাতি দেখার জন্য রাত হলো বেস্ট। তাই রাতে ওখানে থাকার প্ল্যান আছে। দেখার প্রচুর সম্ভাবনা রাতে। দিনে কিছুটা চান্স কম থাকে। তবে যাই হোক, দেখা যাক কি আছে কপালে সাম্নের বার। খাওয়া শেষে পান দিলেন। অনেক গল্প হলো। আসলে কোন একটা দুর জায়গায় গেলে ওখানে মিশে যেতে হয়। ওদের ভাষায় কথা বলতে হয়। ওদের সাথে খেতে হয়। ওদের সাথে নিয়ে চারদিক দেখতে হয়। ওরা ওই প্রকৃতির সাথে মিশে আছে। আপনি যদি মিশে যান – প্রকৃতি কে অনুভব করতে পারবেন আরো অনেক বেশী শ্বাস – প্রশ্বাসে, রক্তের ভেতরে। প্রকৃতি আপনার কাছে ধরা দেবে। আমি জানি না – হয় তো বোঝাতে পারলাম না। যাই হোক, খাওয়া শেষ করে ভদ্রলোক কে সাথে নিয়ে (তিনি শহরে যাবেন) এলাম অন্য একটা পথ দিয়ে (যেই পথে হাতি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে)। DSC05926 copy আসার সময় প্রচুর ক্ষেত দেখলাম। ফার্ম এর প্রচুর অদ্ভুদ সুন্দর গাছ দেখালাম। এই গাছ থেকে নাকি তেল হয়। ফার্মের তেল!!! ফার্মের মুরগী হয় শুনেছি। তেল ও হয় হয়। 😀DSC05943 copy DSC05954 copy DSC05941 copy এবারের টুর টা মনে হল আল্লাহ্‌ সাহায্য করেছেন। অনেক কিছু দেখিয়ে দিলেন আল হামদুলিল্লাহ। ও হ্যাঁ, ভুলে গেছি, এই সব চেইন জঙ্গল -এ বান্দরবন ইত্যাদি জায়গা থেকে উপজাতিরা আসে। এসে জঙ্গলে শিকারে যায় – গুইসাপ, সাপ, সজারু, শুকর সহ আরো নানা বন্য প্রাণী শিকার করে। কিছু দিন আগে কারা যেন একটা হাতি হত্যা করে। পড়ে ছিলো ওদিকে। যাই হোক, আমার আরো ইচ্ছে আছে – এই জঙ্গলে তাবু নিয়ে ৩/৪ দিনের জন্য ঢুকে পড়বো। তবে ভালো করে জানতে হবে – হাতীর পালের সামনে পড়ে গেলে কি করতে হবে। কারন হাতিরা এই সব জঙ্গল গুলো তে ঘুরে বেড়ায়। আর খাবার এর কমতি হলে পাহাড় ছেড়ে নেমে আসে। তাছাড়া বন্য শুকর এর মামলাও আছে। আমি খাগড়াছড়ি থেকে দেবতার পাহাড়ে গিয়ে দুরে একটা টিলার মত জায়গার কথা জেনেছিলাম। (এখানে আছে সেই কাহিনি) ওখানে ভালুক থাকে। বিশাল আকারের। মানুষ মেরে ফেলেছিলো ২ জন। ভালুকের বাচ্চা ছিলো – সেটার সাইজ ই নাকি ২০ ফিট। আমি ধরে নিচ্ছি ১৫ ফিট হতে পারে। তবে মা টা কত বড় হবে কে জানে। জানি না – সেই সাহস আছে নাকি – এদের এরিয়াতে ঢুকে পড়ার। ঢোকার জন্য কলজে দরকার। কলজে আছে – তবে সাইজ প্রবলেম 😀  আপাতত বন্য হাতীর পাল দেখার কাজ টা সারি। ঠিক করেছি সামনের ব্রহশপতি বার বিকেলে গিয়ে রাতে থাকবো। দিনে-রাতে যখন দেখতে পাই – চান্স নিয়ে দেখবো। পরদিন শুক্রবার সারাদিন থেকে বিকেলে ফিরে আসবো ইনশাল্লাহ। যদি সুস্থ (বলতে চাচ্ছি যদি বেঁচে থাকি) তবে ফিরে এসে লিখবো ২য় পর্ব।  পুনশচঃ ভালো হত পুর্নিমার সময় যেতে পারলে। অন্ধকারে হাতি ভাল ভাবে দেখা যেতো। এখন দেখলেও অন্ধকারে ছবি তোলা যাবে না। আর লাইট মারলে নাকি এরা আক্রমন করে বসে। আমার আগের কিছু প্রাসংগিক পোস্টঃ

বাশখালি বিচ

দেবতা পুকুর, অরণ্য কুটির, খাগড়াছড়ি

এই দক্ষিন চট্টগ্রাম এর দিকে বন্য হাতির আক্রমনে প্রতি বছর কিন্তু মানুশ মারা জায়। এ নিয়ে পত্রিকায় খবর বের হয়। যেমন এখানে দেখতে পারেন

Leave a comment

Join 248 other subscribers

Contact Info

Email: black_guiter@hotmail.com Skype: hassan.tanvir1
copyright @ hassantanvir.wordpress.com 2015